/ জাতীয় / সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড়, প্রশ্ন তুললেন খোদ সমন্বয়কই!
শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন
সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড়, প্রশ্ন তুললেন খোদ সমন্বয়কই!
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় খোদ এক সমন্বয়কই সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন ওই সমন্বয়ক। অনেকেই আবার ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। বুধবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।' আরেক পোস্টে রিফাত লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য ফুলটাইম কাজ করবে এমন বড় একটা এক্সপার্ট টিম অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি শুক্রবার একটা জেলা সফরের ফালতু ট্রেন্ড বাদ দিতে হবে।' রিফাতের স্ট্যাটাসের জবাবে সারজিস লিখেছেন- ‘আন্দোলন করা লাগবে না, কাল থেকে তুই দায়িত্ব নে।' প্রত্যুত্তরে রিফাত বলেন, ‘আমি কেন দায়িত্ব নেব? আপনি এক্সপার্ট লোকজন আনতেছেন না কেন? মেডিকেল, হেলথ ইকোনমিকসহ এই সেক্টরের এক্সপার্ট মানুষজন আনেন। সারা দেশে অসংখ্য গ্রুপ আর্কাইভ ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টাবলিস হয়েছে। এদের ইনক্লুড করেন। টিমটা বড় করেন। ভেরিফিকেশনের শেল্টারে আরও বড় করেন’। সারজিসের সমালোচনা করে চীনের গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিহাদী ইহসান বলেন, যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা নাই সে দায়িত্ব নিয়েছো কেন? ছোটলোকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পাইলে সব খাইতে চায়, হজম করার কথা ভুলে যায়। কত বড় আহাম্মক হলে রিফাতকে বলে- ‘তুই কাল থেকে দায়িত্ব নে’। ‘তুমি দায়িত্ব নিয়েছো কেন? শহিদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করতে’- বলেন জিহাদী। রিফাতের মন্তব্যে সারজিস যে জবাব দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন কবি হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা) নাই অথচ অভিমান আছে। বাহ! শুধু এই দায়ীত্বজ্ঞানহীন রিপ্লাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইমিডিয়েট তার রিজাইন/স্যাক দেওয়া/করা উচিত। আরেক পোস্টে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনে হেল্প পাইতে সুপারিশ লাগবে কেন? একজন যোদ্ধার ক্ষতস্থানই কি তার সুপারিশের জন্য এনাফ নয়? সুপারিশকারীরাই কি তাহলে নয়া পাওয়ার হাউস? বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব ফাউন্ডেশন কি জুলাই ফাউন্ডেশন?’ জুলাই ফাউন্ডেশন ও সারজিসকে নিয়ে দেওয়া রিফাতের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারের পলিসি ও প্ল্যানিং প্রফেশনাল দিলশানা পারুল। রিফাতের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি তার এই বক্তব্য সত্যিই পছন্দ করেছি। তার দাবি সুস্পষ্ট এবং খুবই গণতান্ত্রিক। তারা প্রকাশ্যে জবাবদিহি চাইছে’। আরেক পোস্টে দিলশানা পারুল লেখেন, জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমার সীমিত যোগাযোগ থেকে যা জানতে পেরেছি, তা হলো- জুলাই ফাউন্ডেশনের ওয়েবপেজে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো সংখ্যার ভিত্তি নেই। মিনিস্ট্রি যতজনকে ভেরিফাই করে, ফাউন্ডেশন সেই সংখ্যাটাই ভেরিফায়েড হিসেবে গ্রহণ করে। সরকার যাদের ভেরিফাই করেনি, ফাউন্ডেশন তাদের টাকা দিতে পারে না। যদি সরকারের দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া কেউ ফাউন্ডেশনে আসে, তাহলে ফাউন্ডেশন সেটা ভেরিফিকেশনের জন্য হেলথ মিনিস্ট্রিকে পাঠায়। মিনিস্ট্রি সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ভেরিফাই করে সেটি হেলথ মিনিস্ট্রিতে পাঠান। হেলথ মিনিস্ট্রি তথ্য ইনফরমেশন সিস্টেমে দিলে তখন ফাউন্ডেশন সেই ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এখানে আমলারা অনেক সময় দেরি করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এই ভেরিফিকেশন ৪ দিনের মধ্যে করা উচিত, কিন্তু আমি শুনেছি এটি ৪ দিনে কখনই সম্পন্ন হয় না। এছাড়া ফাউন্ডেশনে আবেদন করার সময় আহতদের অনেকগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় (এটা মনীষা আপার পোস্ট থেকে আগেই জেনেছি)। এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করে ফাউন্ডেশন নিজেই কাগজগুলো অথেনটিক কিনা যাচাই করতে পারত। এটি হাসপাতালগুলোকে ফোন করে খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্ত যতদূর জানলাম মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব এখনো ছাড়েনি বা ছাড়তে রাজি নয়। বর্তমানে আহতদের নিজ উদ্যোগে মেডিকেল ডকুমেন্টগুলো হাসপাতাল থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়, যা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। ফাউন্ডেশনের উচিত এ প্রক্রিয়াটি সহজ করে আহতদের কাগজপত্র নিজেই যাচাই করে নেওয়া। আমরা কোভিডের সময়ই বুঝতে পেরেছি আমাদের হেলথ মন্ত্রণালয়টা আসলে কী জিনিস। এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় জুলাই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে যেন তাদের উপর কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব না পড়ে এবং সহজে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়। সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে রিপোর্ট করুন- —কেন আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এমন অবস্থা? আহতরা কেন এমন ভোগান্তির শিকার?’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সম্পাদক আল মাশনূন বলেন, ‘সারজিস ভাই একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন, কতটা মেটাতে পারবেন জানি না, তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের মতো পবিত্র একটা জায়গায় কাজ ভালোভাবে না করতে পারলে তার উচিত কাজ আমাদের দিয়ে দেওয়া!আমরা আমাদের জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে এখানে পুরোটা সময় দিয়ে দিতে আগ্রহী। মানুষের গালি, অভিশাপ, কান্না দেখে আর শুনে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন, এখন তাদের স্বপ্নের মতো দেশ সংস্কার করার কাজে যে আমরা বিবেকের কাছে আটকে টিকে আছি তার চেয়ে শহীদ হওয়া উত্তম ছিল!’ তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব দিয়ে দেন বলতে আমাকে বা কোনো গোষ্ঠীকে দিতে হবে বিষয়টা এমনও না। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করি- কে ভালো হবে তাকেই বসাই, তবুও কাজ হোক। ফারদিন হাসান বলেন, আজকে হঠাৎ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠায় কিছু তথ্য চেক করতে তাদের ওয়েবসাইটে গেলাম। তাদের অ্যাবাউটস সেকশনে গিয়ে আমি যা দেখি তাতে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। আমরা যখন ব্যস্ত একাত্তরে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ শহীদ সে হিসাব নিয়ে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন তখন আমাদের জুলাইয়ের শহীদদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে সাতশ’ বানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এই আজগুবি সংখ্যাটা বললেন তখনো বুঝি নাই এর ভিত্তি কী? এখন তো দেখছি এই অকাজের পেছনে ফাউন্ডেশন নিজে। ‘সারজিস ও স্নিগ্ধ কি দায়িত্বশীল হিসেবে শহীদদের অস্বীকার করার দায়ভার নেবে? তেরোশর অধিক শহীদকে অস্বীকার করে তারা কি নিজেদের পদে বহাল তবিয়তেই থাকবে? আই এম সরি, বাট এইটা রক্তের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই না’, বলেন তিনি। কাজী ওয়ালী উল্লাহ নামে একজন লেখেন- একজন শহীদ পরিবার বা আহত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার পায় না, আমরা বিভিন্ন সরকারি অফিসে গেলে হাসিনার আমলে যেমন ব্যবহার পেতাম! এই কারণে যাদের কিছুটা সামর্থ্যও আছে, ওই টাকার জন্য যায় না। যারা গেছেন, দ্বিতীয়বার যেতে না হওয়ার জন্য দোয়া করে। শহিদের স্ত্রীদের প্রায়ই শুনতে হয়, ‘বয়স কম, আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে, তাদের টাকা লাগে কেন’! যেই স্ত্রীর বাচ্চা নাই, তাকে তো ধুর-ধুরই করে। যারা এগুলোর প্রতিবাদ করে তাদের এমন চোখে দেখা হয় যেন তারা কোনো অপরাধী! এই হইলো জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আমরা কেন এই ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলা শুরু করছি ধীর ধীরে আরও ভালো বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশ নদী অধিকার সংরক্ষণ কমিউনিটির আহ্বায়ক ইবরাহিম মাহমুদ বলেন, স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য যে ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার প্রোপার হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ওনারা পদত্যাগ করতে পারেন। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য অসম্মানের কিছু না। বরং মাল্টিপল কাজের প্রেশার একসঙ্গে নিতে না পারাই উপদেষ্টাসহ প্রত্যেকের সেক্টর বেইজড ফেইল করার মূল কারণ। সারজিস আলমের উচিত ন্যাশনাল পলিটিক্সে মনোনিবেশ করা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই পথের পাথওয়ে হতে পারতো যদি না এইটা ওয়ার্ক করতো ঠিকঠাক। সে সম্ভাবনা আর নাই। এখন অন্যভাবে মুভ করা উচিত। জিয়া মাহমুদ মির্জা নামে একজন লেখেন- নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক জনাব সারজিস আলমকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে জুলাই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সম্ভব আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, আহত ও শহীদ পরিবারকে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সেখানে সারজিস সাহেব জুলাই ফাউন্ডেশনের কাজ ফেলে রেখে নিজের সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকে। অর্থ সহায়তা দেওয়ার নাম করে জেলা সফর আর রাজনৈতিক সমাবেশ করে বেড়াচ্ছে। সে কোন শহরে কবে যাবে তার ওপর ভিত্তি করে যদি সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে ততদিন কি এই ভুক্তভোগী পরিবাররা বসে থাকবে? তার দাবি, জুলাই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দিতে হবে। জুলাই ফাউন্ডেশনের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারবে এমন যোগ্য লোকের কাছে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব দিতে হবে। এম জে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি লেখেন- খুনিদের ঠিকঠাক বিচার না হলে আর শহীদ পরিবার যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ না পেলে এবং আহতরা যথার্থ চিকিৎসা না পেলে এর খেসারত আমাদের ভবিষ্যতে দিতে হবে, জাতিগতভাবেই। ইমরানুল হক আকিব বলেন, এটা আমি স্বচক্ষে দেখে আসলাম। এরকম একটা দায়বদ্ধতার কাজ কত অবহেলায় পড়ে আছে তা দুঃখজনক। আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করাতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। ওদের কত প্রত্যাশা, কত প্রশ্ন! কী বলব আর। মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, পুরাই ফাজলামি চলতেছে চিকিৎসা আর জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে। মীর হুযাইফা আল-মামদূহ লেখেন- আমরা যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গুলি খাইলাম, তারা আমাদের ডাকে একবারও আসে নাই। জুলাইয়ে আহত মোশাররফ ঢামেকে ভর্তি। ওদিকে সারজিসের সাইনের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশনের কোনো চেক হচ্ছে না। সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে নাকি বিদেশে গেছে। আরেক পোস্টে তিনি বলেন, আমার আগের পোস্ট দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, তারেক রেজারা কমেন্ট করে জানাইছে- ‘আমি নাকি মিথ্যাচার করছি, অতিরিক্ত করছি’। অথচ সারজিস বিদেশে এ-ই দাবি আমি করি নাই। আহতের স্ত্রী ৫ বার জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়েও টাকা পান নাই। সেখান থেকে তাকে বলা হইছে- ‘সারজিসের সাইনের জন্য চেক হচ্ছে না, সে বিদেশে’। এই লোক (মোশাররফ) বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে, রানের নার্ভ শুকিয়ে গেছে, দুই মাস কোনো চিকিৎসা ছাড়া পড়ে আছে। দুই মাস আগেই ঢাকার ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, বিদেশে নিতে হবে। চিকিৎসার খরচ হচ্ছে, সরকার দিচ্ছে। কিন্তু তার নিজে চলার জন্য, দুটো মেয়ের খরচ চালাবার জন্য কোনো পয়সা নেই। আগস্টে কিছু টাকা পাইছে, তারপর আর কেউ খোঁজও নেয় নাই, এইটা বলতে বলতেই তারা কাঁদছিল। প্রতিদিন ৫০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ধার করে, নানা মানুষের টাকায় এটা জোগাড় হচ্ছে। জুলাই ফাউন্ডেশনে গত মাসের শুরুতে কাগজ জমা দিয়েছে, সেই টাকাটা পায়নি, সেই টাকা পেলে, তাও চলা যেত কিছুদিন। ভেরিফিকেশন হয় নাই শুনেছি অনেক দিন। আজকে শুনলাম, সাইনের জন্য চেক আটকা। সারজিসের বিদেশ যাওয়া না যাওয়ার ইনফরমেশন নিয়ে এরা যতটা চিন্তিত, আহতদের টাকা পাওয়া নিয়ে ততটাও না। অথচ সেখানেই আটকা চেক। সেখানেই আটকা যাবতীয় ভেরিফিকেশন। এটাই বাস্তব। হা হা হা। সারজিসকে কটাক্ষ করে মো. সাব্বির হোসাইন লেখেন- সার্ভিস আলম ভাই তার দল গোছানো আর অ্যাকাউন্ট ভরা নিয়ে বিজি আছে…। তার কাছে কিসের জুলাই আর কিসের শহীদ? মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ওনার উচিত রিফাত রশিদের পোস্টের কমেন্টের জন্য অ্যাটলিস্ট মুচলেকা দিয়ে রিজাইন করা। এদিকে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে আজ বুধবার জুলাই ফাউন্ডেশনের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবেদন করা হলেও নাম তালিকাভুক্তিতে গড়িমসি করা হচ্ছে, মিলছে না সরকারি সহায়তাও। উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহীদ মিনারে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়। হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহীদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন হামলাকারী আবীর আহমেদ শরীফ। এসব কারণে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। গত ১০ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সম্পাদক করে সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে। আর মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। |