/ জাতীয় / নাম-পরিচয়হীন শিশুর অভিভাবকত্ব দিতে হচ্ছে আইন
নাম-পরিচয়হীন শিশুর অভিভাবকত্ব দিতে হচ্ছে আইন
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
নাম-পরিচয়হীন ও পরিত্যাগ করা শিশুদের অধিকার রক্ষায় একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এসব শিশুর অভিভাবকত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তাদের বেঁচে থাকা, বিকাশ ও সুরক্ষায় ‘পরিত্যাগকৃত শিশুর অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০২৫’ এর খসড়া করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। খসড়া অনুযায়ী, কোনো নারী অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণে জন্ম নেওয়া সন্তান স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করতে পারবেন। পাঁচ বছরের কম বয়সী বৈধ দাবিদারহীন শিশু এবং অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণে জন্ম নেওয়া সন্তান স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করা হলে তা ‘পরিত্যাগকৃত শিশু’ হিসেবে গণ্য হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে পরিত্যাগ করা শিশুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ১৮৯০ সালের দ্য গার্ডিয়ানস অ্যাক্ট অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্টের কোনো ধারায় পরিত্যাগ করা শিশুর অভিভাবকত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত হয়েছে এবং সেটা অনুসারে প্রতিটি মানবসন্তানের বেঁচে থাকা, বিকাশ ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সব শিশুর পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার বিষয়ে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রয়েছে। তাই পরিত্যাগ করা শিশুর অভিভাবকত্ব দিতে এ আইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোছা. হাজেরা খাতুন বলেন, ‘নাম-পরিচয়হীন শিশুদের অধিকার রক্ষা কিংবা তাদের অভিভাবকত্ব দেওয়ার কোনো আইনি কাঠামো নেই। এ বিষয়ে আমরা একটি খসড়া করেছি। খসড়াটির বিষয়ে সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘খসড়া আইন অনুযায়ী পরিত্যাগ করা শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হবে। ডাটাবেজ হবে। মূল কাজ করবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। আইন প্রণয়ন হলে আমরা বিধিমালা করবো।’ খসড়ায় বলা হয়েছে, এ আইনের উদেশ্য হবে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা, বৈষম্যহীনতা, শিশুর জীবনধারণ ও পূর্ণমাত্রায় বিকাশ, শিশুর পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে বয়স এবং পরিপক্বতা বিবেচনায় শিশুর মতামত গ্রহণ ও গুরুত্ব, শিশুর সুষম বিকাশের জন্য পারিবারিক পরিবেশের অনুরূপ লালন-পালন, প্রত্যেক শিশুকে স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ হিসেবে বিবেচনা, প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যা সর্বশেষ ও স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা। পরিত্যাগকৃত শিশু খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে ভিন্ন যা কিছু থাকুক না কেন এই আইনের অধীনে পাঁচ বছর পূর্ণ হয়নি এমন বৈধ দাবিদারহীন অবস্থায় কোনো স্থানে প্রাপ্ত শিশু ‘পরিত্যাগকৃত শিশু’ বলে গণ্য হবে। এছাড়া অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের ফলে কোনো নারী সন্তান প্রসবের আগে স্বেচ্ছায় সন্তান পরিত্যাগ করলেও সে ‘পরিত্যাগকৃত শিশু’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিশু পেলে যা করতে হবে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নাম-পরিচয়হীন কোনো শিশুকে পেলে বা এ বিষয়ে কোনো সংবাদ পেলে তা কাছের থানায় পুলিশ, প্রবেশন কর্মকর্তা, সমমানের কর্মকর্তা বা সমাজকর্মীর কাছে পাঠাবেন। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছের কার্যালয়ে পাঠাবেন বা শিশুর সহায়তায় ফোন ‘চাইল্ড হেল্পলাইন-১০৯৮’ এ জানাবেন। শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মী শিশুকে পেলে সংশ্লিষ্ট শিশুকে তাৎক্ষণিকভাবে কাছের হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মকর্তা বা হাসপাতালে পাঠাবেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত রেজিস্টার্ড চিকিৎসক শিশুর জন্ম তারিখসহ বয়স নির্ধারণ করে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মী এ সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের (শিশু আইনে উল্লেখ করা) সদস্য সচিবকে জানাবেন বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সদস্য সচিব অভিভাবকের সন্ধান পাওয়ার জন্য ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা নেবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা (শিশু আইনের) বা সমাজকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শেষে ছাড়পত্রসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট শিশুর নিরাপদ আশ্রয়, আবাসন, ভরণ-পোষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সাময়িকভাবে কাছাকাছি ছোটমণি নিবাস বা কোনো প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান বা কোনো নিরাপদ স্থানে পাঠাবেন। বোর্ডের সদস্য সচিব প্রাপ্ত শিশুকে তার বাবা-মা বা বর্ধিত পরিবারের কোনো সদস্যের সন্ধান পেলে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে হস্তান্তর করবেন। তা সম্ভব না হলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট শিশুর নামকরণসহ তাকে ‘পরিত্যাগকৃত শিশু’ হিসেবে ঘোষণা করবে। এ শিশুকে বিকল্প পরিচর্যার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে বিকল্প পরিচর্যার উদ্যোগ হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিশুকে কারও অভিভাবকত্বে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ছোটমণি নিবাস এবং এই আইনের অধীন কোনো প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে রাখতে হবে। পরিত্যাগ করা শিশুর জন্মনিবন্ধন না হয়ে থাকলে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪’ এবং ২০১৭ সালের বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। বিকল্প পরিচর্যা পরিত্যাগ করা শিশুর বিশেষ সুরক্ষা, যত্ন-পরিচর্যা, সামগ্রিক কল্যাণ ও সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতে বিকল্প পরিচর্যার উদ্যোগ নিতে হবে বলে আইনে জানানো হয়েছে। বিকল্প পরিচর্যার উদ্যোগ হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাজভিত্তিক একীকরণ ও অভিভাবকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটার ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবকত্ব দেওয়া হবে যেভাবে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে আগ্রহী নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা দম্পতি নির্ধারিত পদ্ধতিতে বা সংশ্লিষ্ট জেলার সমাজসেবা উপপরিচালক/বিভাগীয় পরিচালকের কাছে আবেদন করতে পারবেন। সমাজসেবা কর্মকর্তারা যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষে নির্ধারিত পদ্ধতিতে শর্ত আরোপ করে অভিভাবক নির্ধারণ করে চুক্তিনামা সম্পাদন শেষে সংশ্লিষ্ট শিশুকে হস্তান্তর করবেন। তবে হস্তান্তরের আগে শিশু ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের ডিএনএ পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পরিচালকের কাছে দাখিল করতে হবে। শিশু ও অভিভাবকের ডিএনএ পরীক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট অভিভাবক বহন করবে। অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিধি দিয়ে নির্ধারিত হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিভাবকত্বের অধীন শিশুকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়মিত বিরতিতে পরিদর্শনসহ পরিবীক্ষণ করবে এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন কমিটির কাছে পাঠাবে। শিশু গ্রহণকারী অভিভাবক তিনমাস অন্তর স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট শিশুসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে হাজিরা দেবেন। পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে কারও অভিভাবকত্ব থেকে কোনো শিশুকে প্রত্যাহারের যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে বা কোনো অভিভাবক স্বেচ্ছায় অভিভাবকত্ব ত্যাগ করতে চাইলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট শিশুকে অভিভাবকত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে পারবে। এছাড়া অভিভাবকত্বে থাকা কোনো শিশুর বাবা-মা কিংবা অন্য কোনো আইনগত অভিভাবক শিশুর যত্ন ও হেফাজতের জন্য কমিটির কাছে আবেদন করলে কমিটি নির্ধারিত পদ্ধতিতে অভিভাবকত্ব প্রত্যাহার করে শিশুর বাবা-মা বা আইনগত অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে পাঠাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শিশুর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিভাবকত্ব দেওয়া শিশুকে কেউ দাবি করলে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয়ভার দাবিদার ব্যক্তি বহন করবেন। অভিভাবকত্ব আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা মহাপরিচালকের কাছে থাকিবে এবং তিনি পরিত্যাগ করা শিশুর বিধিবদ্ধ অভিভাবক হবেন। স্বেচ্ছায় সন্তান পরিত্যাগের ইচ্ছা জানাতে পারবে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণের ফলে কোনো নারী সন্তান প্রসবের আগে স্বেচ্ছায় সন্তান পরিত্যাগের ইচ্ছা জানাতে পারবেন। এটা সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, প্রবেশন কর্মকর্তা, সমমান কর্মকর্তা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের যে কোনো সমাজকর্মীকে জানাবেন এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে অঙ্গীকারনামা দেবেন। এরপর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপদে সন্তান প্রসবের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। একই সঙ্গে গর্ভবর্তী মা ও সন্তানের জন্য নিরাপদ প্রসব ও সন্তান জন্ম পরবর্তী সব ধরনের সহায়তা দেবেন। নিরাপদে সন্তান প্রসবের যাবতীয় ব্যয়ভার সরকার বহন করবে বলে আইনে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করবেন। গোপনীয়তা ভঙ্গ করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বেচ্ছায় পরিত্যাগের শিকার কোনো শিশুকে তার মা আবার ফিরে পেতে চাইলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিভাবকত্ব দেওয়ার আগেই বিধি মোতাবেক আবেদন করতে হবে। আদেশের বিরুদ্ধে প্রশ্ন একমাত্র হাইকোর্ট মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জারি করা কোনো আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ছাড়া অন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, জারি করা আদেশের বিরুদ্ধে আদেশ জারির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিবের কাছে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আপিল করা যাবে। এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকত্ব আদেশ বহাল থাকবে। অভিভাবকত্ব নির্ধারণে কমিটি বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে অভিভাবকত্ব নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হবে। দশ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক। এ কমিটি অভিভাবকত্বের জন্য প্রাপ্ত আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। নির্ধারিত পদ্ধতিতে অভিভাবকের সক্ষমতা নিরূপণ করবে পরিত্যাগ করা শিশুর অভিভাবক নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মহাপরিচালকের কাছে পাঠাবে। অভিভাবকত্বের অধীন শিশুর প্রতিপালন নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিবীক্ষণ করবে এ কমিটি। পরিচর্যাকারী ও প্রত্যায়িত প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত শিশুদের অভিভাবকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সব কাজ সম্পন্ন করে কমিটি মহাপরিচালকের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিশুকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে করণীয় অভিভাবক বা তার পরিবারের সদস্য কোনো শিশুর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের অভিযোগ আনা হলে এবং শিশুকে স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা সমাজসেবা কার্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। আইনে আরও বলা হয়েছে, অভিভাবকত্বের অধীন শিশুর প্রতি কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে এ অপরাধের বিচার এই আইনে পরিচালিত হবে। এ আইন বা আইনের অধীনে হওয়া বিধিতে সুস্পষ্ট ও ভিন্ন রকম কোনো বিধান না থাকলে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলী যতদূর সম্ভব প্রযোজ্য ও অনুসরণ করতে হবে। পরিচর্যাকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান পরিত্যাগ করা শিশুর অধিকার, সুরক্ষা ও পরিচর্যার লক্ষ্যে লিঙ্গভেদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচর্যাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছোটমণি নিবাস প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। সমাজসেবা অধিদপ্তর ছোটমণি নিবাসগুলো পরিচর্যাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে। সরকার বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমতি দিতে পারবে বলে আইনে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছোটমণি নিবাস বা সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারবেন। অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে শাস্তি বৈধ প্রত্যয়ন ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা বা বিধিতে উল্লেখিত কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে জানিয়ে খসড়া আইনে বলা হয়, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের কমপক্ষে একবছর কারাদণ্ড বা একলাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি দেওয়া যাবে। আইনের অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত শিশুদের বিকাশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত সরকার সময় সময় পরিপত্র জারির মাধ্যমে পরিচর্যার ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত শর্ত বা মানদণ্ড পরিপালনে ব্যর্থ হলে প্রত্যয়ন সনদ বাতিল করা যাবে। শিশু পালালে করণীয় কোনো শিশু প্রতিষ্ঠান, প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান বা অভিভাবকত্ব থেকে পালালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। পালানোর বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে জানাতে হবে। তবে পালানোর কারণে শিশু কোনো ধরনের অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে না বলে প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য সংরক্ষণ খসড়ায় বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রতিপালিত শিশু, অভিভাবকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে একটি উপযুক্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত করবে। এর মাধ্যমে অভিভাবকত্বের অধীন শিশু, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য একটি কেন্দ্রীয় উপাত্তভাণ্ডারে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। একই সঙ্গে শিশুর তথ্যাদি তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণের পাশাপাশি বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সফট ও হার্ডকপিতে রেকর্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রস্তুত করা ডিএনএ প্রোফাইল ব্যবহার করা যাবে। তবে শিশুর তথ্যের গোপনীয়তা কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না বলে খসড়া ‘পরিত্যাগকৃত শিশুর অধিকার সুরক্ষা’ আইনে জানানো হয়েছে। |