/ রাজনীতি / ১৭ বছর পর মুক্ত বাবর
১৭ বছর পর মুক্ত বাবর
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। গতকাল দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন তিনি। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। বাবরের স্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৭ সালের ২৮শে মে আটক হওয়া লুৎফুজ্জামান বাবর আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে ১৪ই জানুয়ারি খালাস পান। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রায় ঘোষণার পর বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন তার স্বজন ও সমর্থকরা। গতকাল তারা কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকে ভিড় করেন। বাবরের নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনা-৪ আসনের নেতাকর্মীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী মুক্ত বাবরকে বরণ করেন। গাড়ি, মোটরসাইকেল ও মানুষের ঢলে কারাগারের সামনের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কারামুক্ত হয়ে বাবর প্রথমে যান শেরেবাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে। সেখান থেকে নিজের বাসায় যান তিনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাবর দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সবার আগে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান লুৎফুজ্জামান বাবর। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের বিপক্ষে যা কিছু আসুক আমরা তা মোকাবিলা করবো। লুৎফুজ্জামান বাবরকে স্বাগত জানাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অপেক্ষমাণ বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, তার (বাবর) বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ১৭ বছর উনার (বাবর) জীবন থেকে চলে গেছে সেটা কে ফেরত দিবে? তাই আমরা চাই, আওয়ামী লীগ ও গণহত্যাকারী দল যারা জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা করেছে তাদের কঠোর শাস্তি ও বিচার করতে হবে। তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। লিয়াকত হোসেন নামে নেত্রকোনা থেকে কেরানীগঞ্জে আসা এক বয়োবৃদ্ধ বলেন, আমি আগে কখনো ঢাকায় আসিনি। শুধু লুৎফুজ্জামানকে ফুলের মালা দেয়ার জন্য ও একনজর দেখার জন্য নেত্রকোনা থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এসেছি। নেত্রকোনার মদনগঞ্জের আব্দুল জলিল বলেন, বাবর তাদের প্রাণের নেতা তাকে একনজর দেখার জন্য তিনি মদনগঞ্জ থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এসেছেন। নেত্রকোনার আব্দুর রহিম জানান, জীবনে তিনি ঢাকা আসেননি শুধু লুৎফুজ্জামানকে ফুলের মালা দেয়ার জন্য ও একনজর দেখার জন্য নেত্রকোনা থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এসেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে মদনপুর উপজেলার বিএনপি’র সভাপতি নূরে আলম, মোহনগঞ্জ পৌরসভার আহ্বায়ক ফজলুল হক মাসুম, সদস্য সচিব গোলাম রাব্বানী গুলুসহ আরও বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের প্রাণের নেতা নেত্রকোনা-৪ আসনের (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) সাবেক এমপি লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তির খবরে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মী, স্বজন ও এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। তার কারামুক্তিকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, নেত্রকোনায় অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ওদিকে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিব, মদন উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল আলম তালুকদার, খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুর রউফ স্বাধীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স-ঢাকা বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন, লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে আরও পাঁচজন মুক্তি পেয়েছেন। তারা হলেন- কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে এনএসআইয়ের সাবেক ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের সাবেক এমডি মহসিন উদ্দিন তালুকদার, এনএসআইর সাবেক ডিজি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডাইরেক্টর মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মেজর (অব.) এম লিয়াকত হোসেন। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৮শে মে গ্রেপ্তার হন বিএনপি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয় এবং একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মামলাগুলো থেকে একে একে খালাস পান বাবর। এর মধ্যে গত ২৩শে অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে গত ১লা ডিসেম্বর খালাস পান তিনি। সবশেষ চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গত মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। |