![]() জীবনসঙ্গীকে হ্যাঁ বলার আগে যে ১০ বিষয়ে জেনে নেবেন
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে নিজেদের অধিকার, পছন্দ-অপছন্দ ও জীবন দর্শন নিয়ে তত সচেতন হচ্ছে। বিশেষ করে আধুনিক নারীরা মানসিক ও আর্থিকভাবে আগের চেয়ে বেশি স্বাধীন হওয়ায় তারা বিয়ের সময় সমমনা সঙ্গী নির্বাচন করতে আগ্রহী। এজন্য বাগদত্তার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে কিছু জরুরি বিষয়ে আলোচনা করে নিন। যেসব প্রসঙ্গে কথা তুলবেন ১. জীবনের লক্ষ্য ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রথমেই আলোচনা করুন আপনার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে। আপনি ভবিষ্যতে নিজেকে কেমন পরিস্থিতিতে দেখতে চান, কীভাবে কাটাতে চান জীবন- এ ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। প্রত্যেকেরই জীবনের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে, যেমন ক্যারিয়ার, শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত উন্নতি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভবিষ্যতে যে কোনো দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা: হবু যুগলের উভয়েরই নিজেদের ক্যারিয়ার চিন্তা এবং শিক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যদি একজন উচ্চশিক্ষা নিতে চান এবং অন্যজন চাকরিতে মনোনিবেশ করতে চান, তাহলে এ বিষয়ে সমঝোতা করা প্রয়োজন। পরিবার পরিকল্পনা: দুজনই অভিভাবক হতে আগ্রহী কি না। আগ্রহী হলে জীবনের কোন পর্যায়ে সন্তান নিতে চান, কতজন সন্তান নিতে চান- এ বিষয়গুলো সংকোচহীনভাবে বলে ফেলুন। ২. আর্থিক বিষয় নতুন পরিবার গঠন করার আগেই আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে নিজেদের প্রত্যাশা ঠিক করতে ও সুন্দরভাবে জীবন পরিকল্পনা করতে অনেক সাহায্য হবে। আয়-ব্যয়: উভয়েরই আয় এবং ব্যয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত যেন মাসিক বাজেট, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ঋণ ও আর্থিক দায়িত্ব: যদি কারও কোনো ঋণ বা আর্থিক দায়িত্ব থাকে, তাহলে জীবনসঙ্গীকে অবশ্যই সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া দরকার যেন ভবিষ্যতে আর্থিক সমস্যা এড়ানো যায়। ৩. পরিবার এবং সামাজিক দায়িত্ব বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মধ্যে নয়, আমাদের সংস্কৃতিতে এই সম্পর্ক দুটি পরিবারের মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি করে। তাই পরিবার এবং সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক: উভয়েরই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, এ বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কতটা সময় কাটানো হবে, ছুটির দিনগুলো কীভাবে ভাগাভাগি করবেন, উভয়েরই পরিবারের প্রতি বিশেষ কোনো দায়িত্ব থাকতে পারে সেটি কীভাবে পালন করবেন, আপনাদের সিদ্ধান্তে পরিবারের অংশগ্রহণ কেমন হবে- এসব বিষয়ে আগে থেকে ধারণা নিন। তাহলে আপনি আগে থেকেই জানতে পারবেন আপনার বিবাহিত জীবনে কার থেকে কী আশা করবেন। সামাজিক দায়িত্ব: সামাজিক দায়িত্ব এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা করা উচিত। এটি ভবিষ্যতে যে কোনো দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। ৪. ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বাস এটি জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, সাংস্কৃতিক বিশ্বাস তার চরিত্রের সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। শুধু চরিত্র নয়, তার দৈনন্দিন অভ্যাস, আচরণ- সবকিছুতেই এর প্রভাব আছে। তাই বিয়ের আগেই এ বিষয়গুলো জেনে নিন। ৫. ব্যক্তিগত অভ্যাস এবং জীবনযাত্রা প্রত্যেক মানুষের কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস বা পছন্দ থাকে। এ বিষয়েও কথা বলুন। যেমন- খাদ্যাভ্যাস। উভয়েরই খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যদি একজন নিরামিষাশী হন এবং অন্যজন মাংসাশী হন, তাহলে এই বিষয়ে সমঝোতা করা প্রয়োজন। ৬. সংঘাত সমাধানের পদ্ধতি উভয়েরই সংঘাত সমাধানের পদ্ধতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যদি কোনো দ্বন্দ্ব হয়, তাহলে তা কীভাবে সমাধান করা হবে? এমন সময় যোগাযোগের মাধ্যম এবং পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করা যেতে পারে। ৭. স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে শুধু মনের সম্পর্ক নয়, এখানে শরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যৌন সম্পর্ক ছাড়াও একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার জন্যও অনেক তথ্য জানা থাকা দরকার। যেমন, কারও কোনো খারাব বা ওষুধে এলার্জি আছে কি না। বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কি না। ৮. বিনোদন এবং শখ একে অন্যের বিনোদনের মাধ্যম ও শখকে উৎসাহিত করা সফল দম্পতিদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাই নিজেদের আগ্রহ নিয়ে কথা বলুন। হতে পারে একজন সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন এবং অন্যজন বই পড়তে পছন্দ করেন। এ বিষয়গুলো জানা থাকলে একে অন্যের কমফোর্ট জোন হয়ে উঠতে পারবেন সহজেই। ৯. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উভয়েরই ভবিষ্যতের লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যদি একজন বিদেশে যেতে চান এবং অন্যজন দেশে থাকতে চান, তাহলে এ বিষয়ে সমঝোতা করা প্রয়োজন। ১০. পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি একসঙ্গে নতুন জীবন শুরু করা মানেই অনেকগুলো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আধুনিক যুগে নারী-পুরুষ উভয়কেই এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একান্নবর্তী পরিবারে শুধু নারীকেই নতুন জায়গায় এসে ‘মানিয়ে নেওয়া’র যুদ্ধ শুরু করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে নবদম্পতি যখন নতুন একটি জায়গায় নিজেদের সংসার গোছাতে শুরু করেন, দুজনের মনেই নানান প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা কাজ করে। যুদ্ধটা দুজন ভাগাভাগি করে নেন। ফলে উভয়ই পরিবর্তনকে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত কি না এ বিষয়ে জেনে নিন। আপনার হবু জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আগে থেকেই এ বিষয়গুলো আলোচনা করলে একটি সুন্দর স্বচ্ছ সম্পর্কের ভিত্তি শক্ত হবে। তবে ‘মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়’, তাই কখনো ভেবে নেবেন না যে আপনার জীবনসঙ্গীকে বোঝা হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত তার প্রতি মনোযোগী হোন, দেখবেন নতুন নতুন উপলব্ধি আপনাদের সম্পর্ককে চিরসবুজ রাখবে। |