![]() বিএনপির জন্য এবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পরিবেশ কেমন?
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এবারের স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। দায়িত্বশীলদের ভাষ্য, বিগত দেড় দশকের মতো এখনও দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা প্রশ্নের সম্মুখীন। যে কারণে এখন সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, গত দেড় দশকে বিএনপিকে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছে। এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এই পরিবেশ বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। স্বাধীনতা দিবসে বিএনপির কর্মসূচি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এরই মধ্যে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী ২৬ মার্চ বুধবার ভোর ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ঢাকায় ফিরে এসে মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসহ সব ইউনিট মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচির আয়োজন করছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সব ইউনিটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কর্মসূচি সফল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের বাণী মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণমাধ্যমে যে বাণী দিয়েছেন তাতে তিনি বলেছেন, ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। হাজার বছরের সংগ্রাম মুখর এ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আজকের এই দিনে আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই স্বাধীনতা দিবসে আনন্দোজ্জ্বল মুহূর্তের মধ্যে প্রথমেই যে কথা মনে পড়ে, তাহলো এ দেশের অগণিত দেশপ্রেমিক শহীদের আত্মদান; আমি এ মহান দিনে তাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যাদের অবিস্মরণীয় আত্মদানে অর্জিত হয়েছে দেশমাতৃকার মুক্তি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমসহ সকল জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি আমি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। যাদের জীবন মরণ লড়াইয়ে ৯ মাসে আমরা বিজয় লাভ করেছি সেইসব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা জাতি কখনোই বিস্মৃত হবে না। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব মা-বোনদের কথা, যারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। স্বাধিকার আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রক্তস্নাত পথে বিশ্ব মানচিত্রে উদ্ভাসিত হয় আমাদের মানচিত্র। এ দিনে দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তার ঐতিহাসিক ঘোষণায় সেই মুহূর্তে দিশেহারা জাতি পেয়েছিল মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভয়মন্ত্র। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন, মানবিক সাম্যের উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এদেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে গণতন্ত্রবিনাশী শক্তির চক্রান্ত এখনও থেমে নেই। বারবার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী ও অবৈধ শক্তি আমাদের সে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফলে আমাদের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি হোঁচট খেয়েছে এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে চক্রান্তমূলকভাবে হত্যার পরে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সফল ও সার্থক নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ধারা সূচিত হলেও গণতন্ত্রের শত্রুদের কারণে স্থায়ী ও মজবুত গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার হীন লক্ষ্যে পলাতক অবৈধ সরকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে আজও তাই এদেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা নিশ্চিত করা এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সংহত করা। এটিই হচ্ছে স্বাধীনতার মূল চেতনা। আজকের এই মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আমি আহ্বান জানাচ্ছি-জাতির সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বহুমত ও পথের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য। আমি দেশবাসী সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা জানাই।’ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নিয়ে কী বলছেন নেতারা? কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন বলেন, ‘আগে মাঠে নামতে পারতাম না, বেশি মানুষ নিয়ে প্রোগ্রাম করতে পারতাম না। হামলা-মামলার শিকার হতে হতো। এবার বেশি মানুষ নিয়ে প্রোগ্রাম করতে পারছি।’ তিনি বলেন, মুক্ত পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘গত দেড় দশকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার জাতীয় দিবস পালন তো দূরের কথা বিরোধী নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেয় নাই। আমরা বিরোধী নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারিনি। স্বৈরাচার পতনের পর এবার বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা-মামলা হতো। যে কারণে মানুষের উপস্থিতি কম হতো। এবার সেই পরিবেশ নেই। সবাই মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।’ ভিন্ন প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্তান এখনো ক্ষমা চায়নি। এ কথা বলছি এ কারণে, একটি গোষ্ঠী এই বিষয়ে আমলে নিচ্ছে না, তারা বলেছ, ৭১ কোনো ঘটনা না। তারা বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের নাম বলতে চাই না। এখন তারা আবার গলা ফুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচার পতনের পরে যেখানে গণতন্ত্র উত্তরণের কথা ছিলো যে জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে এই উত্তরণে কোনো বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণ ছিলো না। কারণ এখানে সমস্ত জাতি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাকে বিতাড়িত করেছি। যেখানে জনগণের বিজয়ের পরে আবার আমাদের গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিগত দিনের মতো গণতন্ত্র, জনগণের মালিকানা, জনগণের ভোটাধিকার, জনগণের বাক স্বাধীনতা, জনগণের মানবাধিকার সব কিছু আবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা জানি যে, আগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতা দখল করার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো বিভিন্ন স্বৈরাচার গ্রহণ করেছে, আমরা তো ভেবে ছিলাম আমরা সেখান থেকে মুক্ত হয়ে গেছি এবং একটা মুক্ত পরিবেশে দেশের মানুষ তার মালিকানা ভোগ করবে। একটি মুক্ত নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসবে। সেটা আজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এখন সর্তক থাকতে হবে।’ অন্যরা যা বলছেন রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, গত দেড় দশকে স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস সরকার উদযাপন করেছে একজন ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের দেবতা বানানোর জন্য। আওয়ামী লীগ সরকারের কথা শুনলে মনে হতো ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর এখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের অস্বীকার করা হচ্ছে। এই মাসে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের ধৃষ্টতা দেখানো হচ্ছে। এখানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থন রয়েছে বলে আমার মনে হয়। কারণ এই সরকারের ওপর জামায়াত ইসলামীর প্রভাব রয়েছে। জামায়াত ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। এখনো পর্যন্ত তারা ক্ষমা চায়নি। সুতরাং এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে মানুষের সেই আবেগ-উচ্ছ্বাস থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর যেখানে মুক্তিযুদ্ধকে অবমূল্যায়ন করা হয়, সেই পরিবেশে বিএনপিরও মূল্যায়ন হবে না। মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, বিএনপির জন্য এই পরিবেশ স্বস্তির সেটা বলা যাবে না। কেননা বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক। বিএনপিতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর চমৎকার পরিবেশে বিএনপি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে। ২৬ মার্চ বিএনপির আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং এই নতুন আঙ্গিকের রাজনৈতিক পরিবেশে এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বিএনপির রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। |