![]() অংশীদারিত্ব চুক্তি: ব্রাসেলসে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ইইউ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() দুই দিনের এ বৈঠক নিয়ে ঢাকা-ব্রাসেলসের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১০-১১ এপ্রিল পিসিএ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ইইউ। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় পিসিএ নিয়ে সার্বিক আলোচনার পর এটি হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান আলোচক হিসেবে থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস) মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে, ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপোলিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের সম্পর্কের শুরুতে ইইউ ছিল বাংলাদেশের কাছে দাতাগোষ্ঠী (উন্নয়ন অংশীদার), যা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন কিংবা মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। সময়ের ব্যবধানে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। অবস্থান আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে পিসিএ করার আলোচনা শুরু করেছে ইইউ। প্রায় বছর দেড়েকের আলোচনার পর চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পিসিএ নিয়ে ইইউর সঙ্গে এটা হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা। এতে পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তথা সম্পর্কের সব উপাদান থাকবে। ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি ছিল। এখন এটিকে উন্নীত করে কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট করা হচ্ছে। আগে চুক্তিতে ছিল চার-পাঁচটি উপাদান। এখন ৩৫টি উপাদান, বিস্তৃত পরিসর। বাংলাদেশ সরকারের ৫৫ এজেন্সি এর সঙ্গে যুক্ত। চুক্তির আওতায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, শ্রম অধিকার, জলবায়ু ইস্যু, এনার্জি, ফিশারিজ, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ, দক্ষ অভিবাসন, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, কৃষি; মোটামুটি সব আছে এই পিসিএ-তে। জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, পিসিএ নিয়ে এই প্রথম আনুষ্ঠানিক দরকষাকষি শুরু হচ্ছে। এর আগে এটা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এবার মূল আলোচনা শুরু হবে। ইইউর সঙ্গে আমাদের চুক্তিটা এখনো বলবৎ আছে সেটার প্রতিস্থাপন হবে এই পিসিএ চুক্তির মাধ্যমে। এটা হবে কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট। সম্প্রতি ইইউ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হবে বাংলাদেশ। এটি পূর্ণাঙ্গ বা চূড়ান্ত হতে প্রায় দেড় বছরের মতো সময় লাগবে। সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, পিসিএ-এর ফলটা হবে বিস্তৃত। অর্থাৎ ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর যোগাযোগ মাধ্যম হবে এটি। এর আগের চুক্তিতে একটা উচ্চতায় ছিল, এখন অন্য উচ্চতায় যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিসিএ চুক্তি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বাজার অনেক বড় হবে। পাশাপাশি ইউরোপের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী কার্যক্রম নিতে উৎসাহ পাবে। এছাড়া, ইউরোপের বাজারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের আরও একাধিক বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ নিতে পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় পিসিএ-র প্রাথমিক তথা বাংলাদেশ-ইইউর সম্পর্কের একটি রোডম্যাপ এবং সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই দিনব্যাপী ওই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশকে পিসিএ নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া। যার নেতৃত্বে দিয়েছিলেন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপোলিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পিসিএ চুক্তির খসড়া ব্রাসেলস থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। এই চুক্তির আইনি কাঠামো নির্ধারণ করা হয় মানবাধিকার-বিষয়ক। চুক্তিতে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, অন্তর্জাল নিরাপত্তা কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার মতো উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ ও বিকাশের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন করে ইইউ–বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে ওই অনুষ্ঠানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় পিসিএ চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছিল ইইউ। পরবর্তীতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পিসিএ চুক্তির খসড়া ঢাকায় পাঠিয়েছিল ইইউ। এর ধারাবাকিহতায় গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় পিসিএ-র প্রাথমিক আলোচনা হয়। |