![]() ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় কারা?
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() এদিকে সরকারি ঘোষণার আগেই ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের মন্তব্য হলো- উনারা এটা করতে পারেন না। ভোক্তা অধিকার নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা নেবে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্য তেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সভা শেষে এমন মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের নতুন দর ঘোষণা করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে সয়াবিন তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করেছি। এই মুহূর্তে ফর্মুলা অনুযায়ী তেলের দাম আছে প্রতি লিটার ১৯৭ টাকা। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দাম নির্ধারণ করেছি। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা তুলে ধরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার ভোজ্য তেলে কর অব্যাহতি দিয়েছিল। এতে মাসে ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল। সরকারের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করার জন্য রাজস্ব অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রমজানকেন্দ্রিক চিন্তা করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার একটা কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। সয়াবিন তেলের কর অব্যাহতি সুবিধাটা আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্য তেলের শুল্ক-করে যে রেয়াত দিয়েছিল, তার মেয়াদ গত ৩১শে মার্চ শেষ হয়। তার আগেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মিল মালিকরা। বোতলের সয়াবিনের দাম তারা এক লাফে ১৮ টাকা বাড়াতে চান। আর খোলা সয়াবিনের দাম বাড়াতে চান লিটারে ১৩ টাকা। ভোজ্য তেলের কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১লা এপ্রিল থেকে এই দর কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গত ২৭শে মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দেয় মিলারদের সংগঠন। ঈদের ছুটি শেষে গত সপ্তাহের শুরু থেকে দাম নিয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়। এরপর সরকারি ঘোষণার আগেই গত ১৩ই এপ্রিল সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় মিলারদের সংগঠন। পরে গতকাল ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নেয় সরকার। ওদিকে তেলের দাম এখন বাড়ালেও অদূর ভবিষ্যতে তা আবার কমে আসার আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদার বিপরীতে দেশে সরিষা থেকে আসে প্রায় সাত লাখ টন। এর বাইরে রাইস ব্র্যান্ড থেকেও আসে ৬ লাখ টনের মতো। সেনা কল্যাণ সংস্থার তেল মিলকে টিসিবি’র মাধ্যমে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। তাদের তিন লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও মাত্র ২০ হাজার টন উৎপাদন করতো। আমরা তাদের উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগানোর চিন্তা করছি। এ ছাড়া দেশীয় দুটি বড় কোম্পানিও এই ব্যবসায় আসবে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আজকে যে মূল্যটা নির্ধারণ হলো, সরকার এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করবে। সামনে বাজারে তেলের দাম আরও কমবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যটা কমবে। এদিকে দাম বাড়লেও তার প্রভাব পরিবারে খুব বেশি পড়বে না বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, তাই এই বাড়তি ১৪ টাকা সংসারে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে হয়। একটা পরিবারে যদি মাসে ৫ লিটার তেল খরচ করে, তাহলে বাড়তি ব্যয় হবে ৭০ টাকা। মাসের সব ব্যয়ের সঙ্গে এই ৭০ টাকা বাড়তি হলেও তা কিছুটা হলেও সহনীয় হবে। এ বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরাই। সরকার ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হয়েছে। ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ একপক্ষীয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমরা গণমাধ্যম ও ভোক্তার প্রতিনিধি রাখার দাবি জানিয়েছিলাম। তাহলে আমরা অন্তত বুঝতে পারতাম কোন প্যারামিটার ধরে দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরকার এই দাবি গ্রহণ করেনি। সবকিছু আগের সরকারের সিস্টেমেই চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র ম্যান পরিবর্তন হয়েছে। কোনো প্রকার সংস্কার হয়নি। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোজ্য তেলের দাম কম। সেক্ষেত্রে এটি আমলে নেয়া হলে তেলের দাম বাড়ার কথা নয়। দাম বাড়লে ঠিকই আমলে নেয়া হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। |