![]() মার্কিন শুল্ক ও আইএমএফের কিস্তির অর্থ ছাড়: যুক্তরাষ্ট্র ও আইএমএফ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চায়
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
![]() যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে শুল্ক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিতে চায়, তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএমএফ-এর সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটি ঋণের কিস্তি ছাড়ের আগে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার আরও নমনীয় করা, রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতের সংস্কারের বিষয়ে সুনর্দিষ্ট পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে। দুই পক্ষের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন লুৎফে সিদ্দিকী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বাড়তি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ দেশভিত্তিক এই শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইউএসটিআর-এর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার কথা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় এমন কিছু পণ্যে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে। পাশাপাশি অশুল্ক বাধা দূর করা হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়োজাহাজ, এলএনজি, কাপড় ও তুলা কেনার পরিমাণ বাড়ানোর কথা জানানো হয়। এ সময় ইউএসটিআর-এর পক্ষ থেকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের কাছে দেবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, তাদের কাজের পরিবেশের উন্নতিসহ শ্রম পরিস্থিতি, শ্রম আইন ও মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়েও জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিষয়ে কখন কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে দেশটি। ২ এপ্রিল বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার জন্য। পরে তা স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার আইএমএফ-এর ডিএমডি নাইজেল ক্লার্কের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশ প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আলোচনায় আছি এবং একটি ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছেছি। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইএমএফ তাদের প্রধান দুটি শর্তের বিষয়ে অনড় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার আরও নমনীয় করা বা টাকার মান কমানো এবং ডলারের দাম বাড়ানো। অপরটি হচ্ছে, রাজস্ব আয় বাড়ানো। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসনও ওই দুটি শর্তের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিনিময় হার ও রাজস্বের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি পর্ষদে উঠবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলারের দাম বাড়াতে চাচ্ছে না। কারণ, ডলারের প্রবাহ বাড়ার কারণে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এখন টাকার মান কমানো হলে আবার মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাবে। এখন মূল্যস্ফীতি কমানোকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার কাজ করছে। রাজস্ব আয় হঠাৎ বাড়ানো সম্ভব নয়। এটি বাড়াতে গেলে মানুষের হয়রানি বাড়বে। এ বিষয়ে আইএমএফ-এর কাছ থেকে আরও সময় নেওয়া হবে। ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া ওই বৈঠক শেষ হবে আজ। বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে- বিশ্বব্যাংক : বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্বব্যাংক থেকে রিজিওনাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্রমাগত আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে পরিস্থিতির উন্নত হলে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিও হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশে ওঠতে পারে। |